গল্পের শুরুটা হয়তো আরও আগেই। তবে আমরা মানে ফুটবল পূজারিরা সে গল্পের শুরু দেখছি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোতে। সৌদি আরবের ক্লাব ‘আল নাসরে’ যখন তিনি নাম লেখালেন তখন থেকে। সে সুবাদে ইউরোপিয়ান ফুটবলের রাজা ৩৮ বছর বয়সে এসে এশিয়ায় পা রেখেছেন। দৈনিক ৭ কোটি মজুরিতে! ক্যারিয়ারের গোধূলিলগ্নে দাঁড়িয়েও রথী-মহরথীরা প্রাচুর্যের মোহ ত্যাগ করতে পারেন না সেটা আরেকবার প্রমাণ করলেন তিনি। কিন্তু তখনও কারও কল্পনায়ও আসেনি, ফুটবলের নতুন বিপ্লব আসন্ন!
রোনালদোর সৌদি যাওয়ার গুঞ্জনের শুরু কাতার বিশ্বকাপ থেকে। তাকে নেওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে গণমাধ্যমগুলো দাবি করে, ২০৩০ ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক হতে চায় দেশটি। সেজন্য তারকা একজন ফুটবলারকে এনে নিজেদের লিগের শোভা বাড়ানোর প্রচেষ্টা মাত্র।
তবে রোনালদো আল নাসরে নাম লেখানোর ৬ মাস পার হতে না হতেই এক ঝাঁক সেরা ফুটবলার চলে এসেছেন লিগটিতে। যার সবশেষ সাদিও মানে। তিনিও সঙ্গী হয়েছেন পর্তুগীজ তারকার ক্লাবে।
নতুন মৌসুম শুরুর আগে এক ডজনেরও বেশি ইউরোপিয়ান ফুটবলার পাড়ি জমিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে। অপেক্ষায় আছেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার উইলিয়ানও। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ইংলিশ ক্লাব ফুলহামের হয়ে চুক্তি নবায়ন করেছেন। তারপরই পেয়েছেন সৌদির ক্লাব থেকে লাভজনক প্রস্তাব। যা শুনে নিজেকে আর সংযত রাখতে পারছেন না তিনি। পারলে এখনই দলবদল করতে চান এই ফুটবলার।
তবে শুধুমাত্র একটা বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্যই ফুটবলারদের পেছনে এত কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ! নাকি সৌদি আরবের চোখ বিশ্বকাপ ছাড়িয়ে আরো সদূরে? নাকি ফুটবলের নিয়ন্ত্রণটাই নিতে চাচ্ছে নিজেদের দখলে। যেটা এখন ইউরোপের হাতে?
রোনালদোর সৌদি প্রো লিগে যাওয়াতে ভক্তদের প্লে লিস্টে জায়গা করে নেয় নতুন একটি লিগ। তবে ইউরোপিয়ান ফুটবল কর্তারা বিশেষ পাত্তা দেননি বিষয়টিতে। ৪০ ছুঁই ছুঁই পর্তুগিজ তারকা শেষ বয়স উপভোগ করতে চান, সঙ্গে বাড়তি কিছু রোজগার। আর তাই সৌদিকে বেছে নিয়েছেন, এটাই ভেবে নিয়েছিলেন তারা।
তবে ধাক্কাটা শুরু হয়েছে গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরু থেকে। বড় চমকটা দেন করিম বেনজেমা। রোনালদোকে অনুসরণ করে রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকা আল ইত্তিহাদে নাম লেখান। বছরে আয় করবেন ৮১৬ কোটি টাকা। তারপর ইংলিশ জায়ান্ট চেলসির চার ফুটবলার একসঙ্গে পাড়ি জমান সেখানে। যার মধ্যে তিনজনই আল নাসরে। এনগুলো কন্তে, কালিদু কুলিবালি ও হাকিম জিয়েচ সঙ্গী হন সিআরসেভেনের। এডুয়ার্ড মেন্ডি যুক্ত হন আল আহিলে।
যা দেখে উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্ডার সেফেরিন তখন সৌদি লিগকে নিয়ে বিদ্রুপ করে বলেছিলেন, ‘আমার মতে, এটা সৌদি আরবের ভুল। একাডেমিতে বিনিয়োগ করে নিজেদের খেলোয়াড় তৈরি করা উচিত। বুড়ো ফুটবলারদের কিনে কাঠামোর উন্নতি করা যাবে না। এই ভুল চীনও করেছিল। তবে ক্যারিয়ারের শেষবেলায় কিছু খেলোয়াড় অন্যত্র গিয়ে কিছু অর্থ আয়ের চেষ্টা করেই থাকে।’
তার সেই মন্তব্যের মাস পার হতে না হতেই ইউরোপিয়ান ফুটবল ক্লাবগুলোকে সতর্ক করতে শুরু করেছেন সাবেক ফুটবলার ও কোচরা। যাদের মধ্যে অন্যতম সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে ট্রেবলজয়ী কোচ ও ম্যানচেস্টার সিটির ম্যানেজার পেপ গার্দিওলা। ফুটবলের বাজার যে সৌদির লিগ বদলে দিয়েছে সেটা বুঝতে পেরেই এমন সতর্কতা জারি তার।
তিনি বলেছেন, ‘ফুটবলের বাজার বদলে দিয়েছে সৌদি। রোনালদো যাওয়ার সময় কেউ ধারণা করেনি, সৌদি লিগে এতগুলো সেরা খেলোয়াড় খেলবে। ভবিষ্যতে আরও সেরা মানের ফুটবলার সেখানে যাবে। এ জন্য ক্লাবগুলোর সতর্ক হওয়া উচিত। কি ঘটতে চলেছে সেটাও ভাবা দরকার।’
গার্দিওলার সুরে সুর মিলিয়েছেন আর্সেনাল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ। যদিও সাবেক জার্মান ফুটবলার ও বায়ার্ন মিউনিখ কোচ টমাস টুখেলের মতে, সৌদির এমন বিনিয়োগ ফুটবলের প্রতিযোগিতাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
পাঠকের মতামত